বলা হয়ে থাকে ডিম জাতীয় খাদ্য! শুনতে একটু অন্যরকম শুনালেও কিন্তু এটা সত্য। কারণ আমাদের সবার বাড়িতেই ডিম থাকে।
ডিমের পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।
শরীরের পাশাপাশি ডিম আমাদের ত্বক ও চুলের যত্নে ভূমিকা রাখে অপরিসীম। ডিমের নানা পুষ্টিগুন আপনাকে ভেতর থেকে যেমন স্বাস্থ্যসমৃদ্ধ এবং সুন্দর করে তুলে ঠিক তেমনি আমাদের রূপচর্চাতেও বিরাট একটা ভুমিকা পালন করে।
চলুন জানা যাক, আপনি কিভাবে ডিম দিয়ে আপনার ত্বক এবং চুলের যত্ন নিতে পারেন।
★★ত্বকের পরিচর্যায় ডিম
১) ডিমের সাদা অংশঃ একটি ডিমের পুরো সাদা অংশ ভালো করে ফেটে নিন। এতে আধা চা চামচ ময়দা ভালো করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখসহ গলা ও হাতে লাগান। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
ডিমের সাদা অংশ মুখের অতিরিক্ত তেল দূর করতে সহায়তা করে। এটি ত্বক কে কোমল এবং মসৃণ করে তোলে যা আপনার বলিরেখা দূর করতে সহায়ক।
যাদের ত্বক খুবই তৈলাক্ত তারা এই প্যাকটি সপ্তাহে ২বার ব্যবহার করতে পারেন।
২) ডিম এবং চালের গুঁড়োর প্যাকঃ ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। এরপর এতে ১ চা চামচ চালের গুঁড়া ও ২ চা চামচ দানাদার চিনি মেশান। মিশ্রণটি মুখসহ পুরো শরীরে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এতে শরীরে লুকিয়ে থাকা ধুলো-ময়লা দূর তো হবেই, সেই সাথে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও মসৃণ।
এটি প্রাকৃতিক ক্লিন্জারের মতো কাজ করে।
৩)ব্ল্যাক-হেডস সমস্যা দূরীকরণে ডিমঃ একটি ডিমের শুধু সাদা অংশ নিন। এর সাথে মোটা দানার বাদামি চিনি মিশিয়ে নিন। চিনি গলে যাওয়ার আগেই এটা দিয়ে মুখের যেখানে যেখানে ব্লাক-হেডস আছে (বিশেষ করে নাকের চারপাশে) সেখানে আলতো করে ম্যাসাজ করুন। ১০ মিনিট ম্যাসাজ করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
যদি আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে থাকে তাহলে মুখ ধোয়ার পর হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
৪) বলিরেখা রোধের জন্য ডিমঃ একটি তুলোর বল / কটন প্যাড ডিমের সাদা অংশে ভিজিয়ে সেটি মুখে ভালো করে লাগান। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক ত্বকের রক্ত চলাচল সচল রাখে। এটি ত্বকের বলিরেখা দূর করে ত্বক ক্লিয়ার রাখতে সাহায্য করে।
৫) ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ডিমঃ আপনার পরিমানমত বেসনের সাথে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নিন। এর সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মেশান। লেবুর রস মিশ্রণের সাথে ভালো করে মেশান। এরপর মুখে লাগিয়ে ১০-১৫মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।
★★ চুলের পরিচর্যায় ডিম
৬) অতিরিক্ত রুক্ষ চুল দূরীকরণের সমাধানঃ ২টি ডিম ভাল করে ফেটিয়ে তার সঙ্গে ২ চামচ মেয়োনিজ মিশিয়ে সমস্ত চুলে মাখিয়ে শাওয়ার ক্যাপ পরে ২০-৩০মিনিট অপেক্ষা করুন। এর পর শ্যাম্পু করে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার এই পদ্ধতিতে যত্ন নিতে পারলে চুলের রুক্ষ ভাব অনেকটাই কেটে যাবে।এটি চুলের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে চুলকে করে নমনীয়।
৭) চুল প্রানবন্ত করতে ডিমঃ ২টি ডিম, ১ চামচ দুধ আর ১ চামচ মধু মিশিয়ে সমস্ত চুলে মাখিয়ে শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন। এরপর ২০-৩০মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। চুল হয়ে উঠবে উজ্জ্বল।
ডিম এবং মধুর পুষ্টিগুণ চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে চুলের আগা ফেটে যাওয়া এবং চুল ভেঙ্গে পড়ার মত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
৮) তৈলাক্ত চুলের জন্য ডিমঃ ২টি ডিম ভেঙে খুব সাবধানে হলুদ অংশ আলাদা করে নিন।এবার ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে ১ টেবিল-চামচ লেবুর রস নিয়ে হালকা ঘন হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন।সমস্ত চুলে এই মিশ্রণ লাগান তবে খেয়াল রাখবেন যেন মাথার ত্বকে এটা না লাগে।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চুল ধুয়ে ফেলুন।
চুলের অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে সঠিক ঘনত্ব দান করতে ডিমের সাদা অংশ সাহায্য করে।
৯)সাধারণ চুলের বৃদ্ধির জন্যঃ একটি পাত্রে ডিম ফাটিয়ে তাতে কয়েক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। চুলে ও মাথার তালুতে মিশ্রণটি লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এরপর শ্যাম্পু করে ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। শুধু ডিম ব্যবহার না করে তাতে অলিভ অয়েল কিংবা টক দই মিশিয়ে নিলে ভালো হয়।
এটি আপনার রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে আপনার চুল বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
১০) মেহেদী প্যাকঃ আপনি যখনই মাথায় মেহেদি লাগাবেন তার আগে মেহেদির সাথে একটি ডিম দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। যদি আপনার ডিমের গন্ধ নিয়ে সমস্যা হয় তাহলে ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে শুধু সাদা অংশটা ব্যবহার করতে পারেন।
মেহেদী আপনার চুলের গোড়াকে মজবুত করে চুল ভেঙ্গে পড়া রোধ করে। ডিম আপনার চুলকে উজ্জ্বল ও প্রানবন্ত রাখতে সাহায্য করে।
★★সতর্কতা
১. ডিম দিয়ে তৈরি প্যাক ব্যবহার করে সব সময় ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করবেন। গরম বা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করলে ডিম চুলে জমে লেগে যেতে পারে।
২. মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
লেখকঃ ইফতিহা জান্নাত ( বিউটি এক্সপার্ট কারনেসিয়া )
তথ্য ও ছবিঃ গুগোল