লেখকঃ ইফতিহা জান্নাত ( বিউটি এক্সপার্ট কারনেসিয়া )
তথ্য ও ছবিঃ গুগোল
একটু ভেবে দেখুন তো আমাদের মা,দাদী,নানীদের ত্বকে কি কি সমস্যা খুঁজে পাই? আমি নিশ্চিত, আপনারা এখন না ভেবে বলে দিতে পারবেন,তাদের ত্বকে এরকম কোনো প্রবলেম ই নেই। কিন্তু আমাদের ত্বকের কথা একবার ভাবুন। দেখবেন অনেকগুলো সমস্যা আপনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তারমধ্যে প্রধান যে সমস্যাগুলো হলো ব্রণ-একনি, অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয়ে যাওয়া,অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যাওয়া, ত্বকের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যাওয়া, বলিরেখা সাথে চোখের নিচে কালো দাগ হয়ে যাওয়া তো আছেই।
আমাদের এতে সমস্যার কারণ একটাই, আমরা সবসময় দ্রুত ফলাফলের আশাতে দিনের পর দিন ত্বকে কেমিক্যাল ব্যবহার করছি। যার কারণে আমাদের ত্বকে শুরু হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা।
কিন্তু কয়েক বছর আগেও এতো এতো কেমিক্যাল পণ্য সহজলভ্য ছিল না। যার কারণে আমাদের আদি মানুষেরা ত্বক চর্চার জন্য বেছে নিতেন প্রাকৃতিক উপাদানগুলো। আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি ছিলো তাদের সুন্দর, দাগহীন ত্বকের রহস্য।
এখন আপনার প্রশ্ন হতে পারে, আপনি জানেন না কিংবা বুঝতে পারছেন না ঠিক কিভাবে উপকরণগুলো ব্যবহার করবেন।
তাহলে চলুন, আজ আপনার এই সমস্যার কয়েকটি আয়ুর্বেদিক সমাধান খুঁজে দিই।
১) কমলালেবুর রস : আমাদের প্রায় সবার বাসায় কমলা থাকে। কমলালেবুর রস ত্বকের উজ্জলতা বাড়ায়। এবং কমলালেবুর রসের ভিটামিন সি-এর অ্যান্টিএইজিং উপাদান ত্বকে বয়সের ছাপ রোধে সহায়তা করে। এর জন্য আপনার লাগবে তাজা কমলালেবুর রস। একটি তাজা কমলা লেবুর রস বের করে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যবহারে ত্বকের উজ্জলতা বাড়বে। এর সাথে দূর হবে ত্বকের বয়সের ছাপ।
২)অ্যালোভেরা প্যাক : অ্যালোভেরা সব চাইতে প্রাচীন ও ভালো প্রাকৃতিক উপায় ব্রণের সমস্যা সমাধানে। অ্যালোভেরার অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের সকল ধরনের ব্রন ও ইনফেকশনের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। এটা ব্রন দূর করে না কিন্তু ব্রণের কারণগুলো দূর করতে সহায়তা করে। আর এর জন্য আপনার শুধুমাত্র অ্যালোভেরার পাতা লাগবে। একটি অ্যালোভেরার পাতা ভেঙে কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। অ্যালোভেরা পাতাতে থাকা ক্ষারীয় হলুদ পদার্থ ভালোভাবে ধুয়ে নিন যাতে এটি জেল এর সাথে মিশে না যায়।এরপর ভেতরের জেল বের করে নিন। এই জেল সরাসরি ত্বকে লাগান। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতিদিন করুন। এক সপ্তাহের মধ্যে ত্বকের পরিবর্তন টের পাবেন।।
অনেকের গাছের অ্যালোভেরা তে এলার্জি সমস্যা দেখা যায়, সেক্ষেত্রে Nature Republic soothing Aloe gel ব্যবহার করতে পারেন। এতে pH মান ঠিক রেখে বাজারজাত করা হয় তাই এতে আপনার এলার্জির সমস্যা হওয়ার আশংকা খুবই কম।
৩) বেসন ও চন্দন প্যাক : ২ চা চামচ বেসন, ২চা চামচ চন্দন গুঁড়ো সাথে ১চা চামচ দুধ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ৩০মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বেসন এন্টি পিম্পল মাস্ক হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। আয়ুর্বেদিক উপাদান হিসেবে চন্দন খুব কার্যকরী উপাদান।
সপ্তাহে ২বার ব্যবহার করলে মুখের দাগ ও পিম্পল কমে আসবে।
৪) টমেটো প্যাক: রূপচর্চায় টমেটোর উপকারীতা অনেক। ১টি টমেটো ভালোভাবে বীজ ফেলে পরিষ্কার করে পেস্ট করে নিয়ে সাথে অল্প একটু হলুদ গুঁড়ো এবং ১চা চামচ টক দই দিয়ে মিশিয়ে নিন। এরপর প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ২০মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
এই প্যাক টি সপ্তাহে ১দিন করে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমে যাবে সাথে আপনার ত্বকে সানবার্ন ও ,সান ট্যান ও দূর করতে সহায়তা করবে।
৫) কাঁচা দুধঃ পরিমানমতো কাঁচা দুধ নিয়ে এতে একটি কটন প্যাট / কটন বল ভিজিয়ে নিয়ে ভালোভাবে ২০মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এটি একটি প্রাকৃতিক আয়ুর্বেদিক ক্লিন্জার হিসেবে কাজ করে। কাঁচা দুধ ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করতে কার্যকর। এই প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করার সাথে সাথে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিবে খুব তাড়াতাড়ি।
৬) আলুর কার্যকারিতা: একটি আলুকে ভালোভাবে ধুয়ে পাতলা স্লাইস করে কেটে নিন। এরপর ১০মিনিট ভালোভাবে ঘষে নিন মুখে।
আলু অন্যতম সেরা আয়ুর্বেদিক একটি উপাদান যা ত্বক থেকে সব ধরনের দাগ ও ছোপ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। এভাবে এক সপ্তাহ আলু ব্যবহার করে খেয়াল করলেই বুঝবেন আপনার দাগ,পিগমেন্টেশন, রিংঙ্কেল অনেকাংশে কমে এসেছে।
৭) মধুর ব্যবহার : হাত ও মুখ ভালো মতো ধুয়ে ১ টেবিল চামচ মধু নিয়ে মুখে ম্যাসাজ করুন ২০/২৫ মিনিট। প্রতিদিন ব্যবহারে বেশ ভালো ফল পাবেন।
মধুতে রয়েছে হিউম্যাকটেন্ট যা ত্বকের রুক্ষতা দূর করে কোমল করে তুলতে সাহায্য করে। এবং ত্বকের ব্রণের সমস্যায় তৈরি ক্ষুদ্র গর্তগুলো দূর করে ত্বককে করে তোলে মসৃণ।
৮) তুলসী পাতার প্যাক: পরিমান মতো মুলতানি মাটি, মধু, পাতিলেবুর রস ও তুলসী পাতা পেস্ট করে একসঙ্গে মিশিয়ে একটি আয়ুর্বেদিক প্যাক বানিয়ে নিন।এর
পর মুখে লাগিয়ে ২০-২৫মিনিট অপেক্ষা করুন। এয়ারটাইট কন্টেনারে ভরে রেখে দিতে পারেন একবার তৈরী করে।
আপনার যদি ব্ল্যাকহেডস আর হোয়াইটহেডস-এর সমস্যা থাকে তবে তুলসী পাতার এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।
★★সতর্কতা
১) কখনোই উপরের ৫/৬ টা প্যাক একসাথে ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বকের উপকারের চেয়ে অপকারের সম্ভাবনা বেশী থাকে।
২) প্যাক ব্যবহার করার আগে অবশ্যই উপকরণ গুলো দেখে নিবেন৷ যদি কোনো উপকরণে আপনার এলার্জির সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে অন্য প্যাক ব্যবহার করুন।
৩) প্রতিটি প্যাক তৈরী করে অল্প একটু হাতে কিংবা গলার একপাশে লাগিয়ে দেখবেন যদি কোনো প্রকার এলার্জি বা রেশ প্রবলেম না হয় সেক্ষেত্রে মুখে ব্যবহার করুন।
৪) প্রতিটি ফেসপ্যাকের কার্যকারিতা নিশ্চিত করে দেওয়া হয়েছে তাই চেষ্টা করুন, যে ২/৩ টি ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন না কেন, সময় নিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করার।
৫)ফেসপ্যাক ওয়াশের পর অবশ্যই আপনার ত্বকের উপযোগী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
একটু সময় ব্যয় করে যদি আপনি ঘরোয়াভাবে এই আয়ুর্বেদিক প্যাকগুলো ব্যবহার করেন তাহলে আপনিও পেতে পারেন সুন্দর, উজ্জ্বল ও প্রানবন্ত ত্বক।
লেখকঃ ইফতিহা জান্নাত ( বিউটি এক্সপার্ট কারনেসিয়া )
তথ্য ও ছবিঃ গুগোল